Wednesday, October 8, 2008

আমার গ্রামের ঈদ

প্রত্যেকটি মানুষেরই কোন না কোন পছন্দনীয় জায়গা থাকে ঘোরার জন্য সে জায়গাটা হতে পারে বিভিন্ন ধরনেরতেমনি আমারও পছন্দের জায়গা হল গ্রামগ্রাম আমার কাছে অনেক ভালো লাগেভালো লাগলেও কিছু করার নেই কারন আমরা আমাদের গ্রামে খুব কম যাইআমাদের গ্রামের বাড়ি হচ্ছে বরিশালবরিশাল অনেক দুরের পথ বাস দিয়ে যাওয়া যায় আবার লঞ্চে করেও যাওয়া যায়তাই আমার মা আমাদের গ্রামের বাড়ি যেতে চায় না, দুরের পথে যেতে অনেক ভয় পায়আমরা ঢাকাতেই থাকি গ্রামে খুব কম যাওয়া হয় বলতে গেলে যাওয়াই হয় নাআমাদের বাড়ির পাশেই আমার খালা বাড়ি, বেশি হলে পাচঁ থেকে ছয় মিনিট লাগে খালা বাড়ি যেতেদৈনিক একবার হলেও খালা বাড়ি যাইআমার খালা প্রত্যেক মাসে একবার হলেও তার শশুর বাড়ি কুমিল্লায় যায়আসছে রোজার ঈদ শুনলাম এবার ঈদেও খালা সহ খালার পরিবারের সবাই কুমিল্লা যাবেতখন ভাবলাম তারা সবাই যদি কুমিল্লা যায় তাহলে আমরা ঢাকায় একা থেকে কি করব? তাই আমি মাকে বললাম, মা চল আমরা মামী বাড়ী যাই এবার ওখানেই আমরা ঈদ করবআমার মামী থাকে তার বাবা-মার সাথে কারণ আমার মামা অনেক আগেই মারা গেছে তাই ভাবলাম ঈদের দিন মামীর মনটা হয়তবা খারাপ থাকবেতাই আরো বেশি ইচ্ছে হল যাবারমামীর বাড়ি জয়দেবপুর ছাড়িয়ে আরো অনেক দূরে, গ্রামটির নাম প্রহলাদপুরওখানে আশেপাশে

অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে ঘুরে দেখবার জন্যসেখানে দেখার মত আরেকটি সুন্দর দৃশ্য হল মাটির ঘরপ্রত্যেকেই মাটির ঘরে বসবাস করেঅনেকের বাড়ি দোতলা পর্যন্ত মাটি দিয়ে তৈরি করামাটির ঘরে থাকতে আমার কাছে অনেক মজা লাগেসবচাইতে বেশি আমি আমার মামী বাড়ি বেড়িয়েছি আমার নিজের গ্রামের বাড়িতেও আমি এতটা বেড়াইনিতারপর আমি মাকে রাজি করালাম মামীর বাড়ি যাবার জন্যমা রাজি হল কিন্তু বলল, ঈদের দিন সকালে যাবে তাতেও আমি রাজি হলামতারপর গেলাম মামী বাড়ি মা তাদের জন্য কিছু ঈদের বাজার নিয়ে গেলসেখানে গিয়েই সবার আগে সব গুরুজনদের সালাম করলামসবাই আমাদের দেখে অনেক খুশি হলসেখানে ঈদের একটি বিশে খাবার হল বিভিন্ন ধরনের পিঠা আর সাবুদানার পায়েসঅন্যান্ন আয়োজন থাক বা না থাক কিন্তু পিঠার আয়োজন থাকবেইআমারও পিঠা অনেক পছন্দ তারপর মামী একবাটি পিঠা এনে দিল আমাদের সামনেখেলাম, খাবার পর মামীর ছোট বোন, নাম লিমা তার সাথে গেলাম মামীর খালার বাসায়সেখানে যাবার পর মামীর খালাও সেই একই খাবার নিয়ে এল, পিঠার এককোনা থেকে আমি একটু পিঠা ভেঙ্গে নিয়ে খেলাম, না খেলে যদি রাগকরে তাইতারপর মামীর খালা বাড়ি থেকে এসে পরলাম মামীদের বাড়িসেখান থেকে আসার পর মামীর ছোট বোন লীমা আর একটি বোনের নাম রজিনা আর আমি গেলাম লীমার এক বান্ধবির বাসায়লীমার বান্ধবির বাড়ি মামীদের বাড়ি থেকে অনেক দূরেআমরা তিনজনে মিলে হাঁটা ধরলাম, হাঁটতে হাঁটতে আমাদের পা ব্যাথা হয়ে গেল, কিন্তু আবার মজাও লাগছিল কারণ রাস্তাটা ছিল সমপূর্ণ ফাঁকারাস্তাদিয়ে তিনজনেই অনেক মজা করতে করতে একসময় লীমার বান্ধবির বাসায় চলে গেলামতারপর লীমার বান্ধবিকে নিয়ে আবার হাঁটা ধরলাম মামীদের বাড়িতে আসার জন্যআসার সময় আরো মজা করলাম চারজনে মিলে আমি, রোজিনা, লীমা আর ওর বান্ধবিলীমার বান্ধবি অনেক ভালো গান গাইতে পারে অনেক সুন্দর কণ্ঠচারজনেই হাটছি, লীমা ওর বান্ধবিকে বলল গান গাওয়ার জন্যতারপর অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু গান গাইল, চারপাশে কি সুন্দর গাছপালা, চারদিক ফাঁকা সুন্দর মিষ্টি বাতাস আর টিপ টিপ বৃষ্টি এর মাঝে আবার গান, কতইনা ভালো লাগছিল আমি তা লিখে বোঝাতে পারব কিনা তা যানি নাএ প্রথম জীবনে আমি ঈদকে এতো উপভোগ করেছি আর এ প্রথম বার আমি ঈদ গ্রামে করেছি তাই হয়তোবা ঈদটাকে আরো বেশি উপভোগ করতে পেরেছিআমি জানি না আর কখনও এরকম ভাবে কোন ঈদ পালন করতে পারবো কিনাআমরা চারজন চলে এলাম বাড়িতে বাড়িতে আসার পরই শুরু হল প্রচন্ড বৃষ্টিতারপর আর ঘুরতে যেতে পারিনি বাহিরেসারাটি দিন ভর বৃষ্টি হলবৃষ্টিটা যখন একটু কমলো তখন লীমার বান্ধবি ওদের বাসায় চলে গেলতারপর একসময় সন্ধ্যা হয়ে এল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলামবৃষ্টির পানি পছে ঘড়ের টিনের চালের উপরে আর শব্দ হচ্ছে, যেন নুপুরের শব্দমনে হচ্ছে কে যেন নুপুর পায়ে হাটছে টিনের চালের উপরতারপর কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেইরাত কেটে আবার সকাল হল মা বলল তৈরি হবার জন্য, ঢাকা ফেরা লাগবে বলেমামী আবার পিঠা দিল খাবার জন্য, পিঠা খেয়ে আমরা তৈরি হয়ে রওনা দেব এমন সময় মামী বলল আরো কিছুদিন থাকতে কিন্তু মা রাজি হল না সবাই আমাদেরকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়ে গেলতারপর আমরা ঢাকার বাসে উঠি একসময় আমরা ঢাকায় এসে পরলাম তারপর আবার সেই আগের মতসবই আগের মত চলছে কিন্তু এখন আমার থেকে থেকে মনে হয়, হারানো দিনটি কি আর ফিরে পাবো? এ কী সম্ভব? আমি জানি না আর কখন আমার মামী বাড়ি গিয়ে কোন ঈদ করতে পারবো কিনা বা অন্য কোন গ্রামে...