প্রত্যেকটি মানুষেরই কোন না কোন পছন্দনীয় জায়গা থাকে ঘোরার জন্য সে জায়গাটা হতে পারে বিভিন্ন ধরনের। তেমনি আমারও পছন্দের জায়গা হল গ্রাম। গ্রাম আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। ভালো লাগলেও কিছু করার নেই কারন আমরা আমাদের গ্রামে খুব কম যাই। আমাদের গ্রামের বাড়ি হচ্ছে বরিশাল। বরিশাল অনেক দুরের পথ বাস দিয়ে যাওয়া যায় আবার লঞ্চে করেও যাওয়া যায়। তাই আমার মা আমাদের গ্রামের বাড়ি যেতে চায় না, দুরের পথে যেতে অনেক ভয় পায়। আমরা ঢাকাতেই থাকি গ্রামে খুব কম যাওয়া হয় বলতে গেলে যাওয়াই হয় না। আমাদের বাড়ির পাশেই আমার খালা বাড়ি, বেশি হলে পাচঁ থেকে ছয় মিনিট লাগে খালা বাড়ি যেতে। দৈনিক একবার হলেও খালা বাড়ি যাই। আমার খালা প্রত্যেক মাসে একবার হলেও তার শশুর বাড়ি কুমিল্লায় যায়। আসছে রোজার ঈদ শুনলাম এবার ঈদেও খালা সহ খালার পরিবারের সবাই কুমিল্লা যাবে। তখন ভাবলাম তারা সবাই যদি কুমিল্লা যায় তাহলে আমরা ঢাকায় একা থেকে কি করব? তাই আমি মাকে বললাম, মা চল আমরা মামী বাড়ী যাই এবার ওখানেই আমরা ঈদ করব। আমার মামী থাকে তার বাবা-মার সাথে কারণ আমার মামা অনেক আগেই মারা গেছে তাই ভাবলাম ঈদের দিন মামীর মনটা হয়তবা খারাপ থাকবে। তাই আরো বেশি ইচ্ছে হল যাবার। মামীর বাড়ি জয়দেবপুর ছাড়িয়ে আরো অনেক দূরে, গ্রামটির নাম প্রহলাদপুর। ওখানে আশেপাশে
অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে ঘুরে দেখবার জন্য। সেখানে দেখার মত আরেকটি সুন্দর দৃশ্য হল মাটির ঘর। প্রত্যেকেই মাটির ঘরে বসবাস করে। অনেকের বাড়ি দোতলা পর্যন্ত মাটি দিয়ে তৈরি করা। মাটির ঘরে থাকতে আমার কাছে অনেক মজা লাগে। সবচাইতে বেশি আমি আমার মামী বাড়ি বেড়িয়েছি আমার নিজের গ্রামের বাড়িতেও আমি এতটা বেড়াইনি। তারপর আমি মাকে রাজি করালাম মামীর বাড়ি যাবার জন্য। মা রাজি হল কিন্তু বলল, ঈদের দিন সকালে যাবে তাতেও আমি রাজি হলাম। তারপর গেলাম মামী বাড়ি। মা তাদের জন্য কিছু ঈদের বাজার নিয়ে গেল। সেখানে গিয়েই সবার আগে সব গুরুজনদের সালাম করলাম। সবাই আমাদের দেখে অনেক খুশি হল। সেখানে ঈদের একটি বিশেষ খাবার হল বিভিন্ন ধরনের পিঠা আর সাবুদানার পায়েস। অন্যান্ন আয়োজন থাক বা না থাক কিন্তু পিঠার আয়োজন থাকবেই। আমারও পিঠা অনেক পছন্দ। তারপর মামী একবাটি পিঠা এনে দিল আমাদের সামনে। খেলাম, খাবার পর মামীর ছোট বোন, নাম লিমা তার সাথে গেলাম মামীর খালার বাসায়। সেখানে যাবার পর মামীর খালাও সেই একই খাবার নিয়ে এল, পিঠার এককোনা থেকে আমি একটু পিঠা ভেঙ্গে নিয়ে খেলাম, না খেলে যদি রাগকরে তাই। তারপর মামীর খালা বাড়ি থেকে এসে পরলাম মামীদের বাড়ি। সেখান থেকে আসার পর মামীর ছোট বোন লীমা আর একটি বোনের নাম রজিনা আর আমি গেলাম লীমার এক বান্ধবির বাসায়। লীমার বান্ধবির বাড়ি মামীদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে। আমরা তিনজনে মিলে হাঁটা ধরলাম, হাঁটতে হাঁটতে আমাদের পা ব্যাথা হয়ে গেল, কিন্তু আবার মজাও লাগছিল কারণ রাস্তাটা ছিল সমপূর্ণ ফাঁকা। রাস্তাদিয়ে তিনজনেই অনেক মজা করতে করতে একসময় লীমার বান্ধবির বাসায় চলে গেলাম। তারপর লীমার বান্ধবিকে নিয়ে আবার হাঁটা ধরলাম মামীদের বাড়িতে আসার জন্য। আসার সময় আরো মজা করলাম চারজনে মিলে আমি, রোজিনা, লীমা আর ওর বান্ধবি। লীমার বান্ধবি অনেক ভালো গান গাইতে পারে অনেক সুন্দর কণ্ঠ। চারজনেই হাটছি, লীমা ওর বান্ধবিকে বলল গান গাওয়ার জন্য। তারপর অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু গান গাইল, চারপাশে কি সুন্দর গাছপালা, চারদিক ফাঁকা সুন্দর মিষ্টি বাতাস আর টিপ টিপ বৃষ্টি এর মাঝে আবার গান, কতইনা ভালো লাগছিল আমি তা লিখে বোঝাতে পারব কিনা তা যানি না। এ প্রথম জীবনে আমি ঈদকে এতো উপভোগ করেছি আর এ প্রথম বার আমি ঈদ গ্রামে করেছি তাই হয়তোবা ঈদটাকে আরো বেশি উপভোগ করতে পেরেছি। আমি জানি না আর কখনও এরকম ভাবে কোন ঈদ পালন করতে পারবো কিনা। আমরা চারজন চলে এলাম বাড়িতে। বাড়িতে আসার পরই শুরু হল প্রচন্ড বৃষ্টি। তারপর আর ঘুরতে যেতে পারিনি বাহিরে। সারাটি দিন ভর বৃষ্টি হল। বৃষ্টিটা যখন একটু কমলো তখন লীমার বান্ধবি ওদের বাসায় চলে গেল। তারপর একসময় সন্ধ্যা হয়ে এল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। বৃষ্টির পানি পরছে ঘড়ের টিনের চালের উপরে আর শব্দ হচ্ছে, যেন নুপুরের শব্দ। মনে হচ্ছে কে যেন নুপুর পায়ে হাটছে টিনের চালের উপর। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই। রাত কেটে আবার সকাল হল মা বলল তৈরি হবার জন্য, ঢাকা ফেরা লাগবে বলে। মামী আবার পিঠা দিল খাবার জন্য, পিঠা খেয়ে আমরা তৈরি হয়ে রওনা দেব এমন সময় মামী বলল আরো কিছুদিন থাকতে কিন্তু মা রাজি হল না। সবাই আমাদেরকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়ে গেল। তারপর আমরা ঢাকার বাসে উঠি একসময় আমরা ঢাকায় এসে পরলাম তারপর আবার সেই আগের মত। সবই আগের মত চলছে কিন্তু এখন আমার থেকে থেকে মনে হয়, হারানো দিনটি কি আর ফিরে পাবো? এ কী সম্ভব? আমি জানি না আর কখন আমার মামী বাড়ি গিয়ে কোন ঈদ করতে পারবো কিনা বা অন্য কোন গ্রামে...